১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। এখানেই তাঁর নাম রাখা হয় মেরী তেরেজা। কিছুদিন পর তাকে এন্টালি কনভেন্ট, কোলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তিনি শিক্ষকতা করেন। প্রথম ব্রত গ্রহণের ৬ বছর পর তিনি ২৪ মে, ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে চির সন্ন্যাব্রত গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর তিনি ঈশ্বরের বিশেষ অনুপ্রেরণা লাভ করেন। যাদের ভালােবাসার কেউ নেই তাদেরকে ভালােবাসা দেওয়ার জন্য তিনি ঈশ্বর কর্তৃক বিশেষ এক আহ্বান পেলেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে মাদার তেরেজা তাঁর লরেটো আশ্রম ত্যাগ করেন ও তাঁর নতুন সম্প্রদায়ের সাধারণ পােষাক পরিধান করেন। মাদারের পকেটে তখন ছিল মাত্র ৫টি টাকা। তিনি নার্সিং প্রশিক্ষণ নিলেন ও বস্তি এলাকায় কাজ শুরু করলেন। বস্তির ভিতরে তিনি স্কুল খুলেলন, বস্তির শিশুদের ক্ষতস্থান ধুয়ে-মুছে দিলেন, দুস্থ-অসহায় পরিবারগুলােতে সাক্ষাত করতে গেলেন এবং রাস্তার ধারে পড়ে থাকা লােকদের চিকিৎসা দিলেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে মাদার তেরেসা ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। এই বছরই “মিশনারীজ অফ চ্যারেটি” নামক ভগ্নী সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২২ আগস্ট মরণাপন্ন মানুষের সেবা করার জন্য “নির্মল হৃদয়” নামে প্রথম গৃহ উদ্বোধন করেন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে মিশনারীজ অফ চ্যারিটি ভ্রাতৃসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৫ খিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি নতুন সংঘটি সরাসরি পােপ মহােদয়ের অধীনস্থ হয়। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে মিশনারীজ অফ চ্যারিটি যাজক সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।
সাধ্বী মাদার তেরেজার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। তার মধ্যে প্রথমটি ছিল ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে পদ্মশ্রী পুরস্কার এবং ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে জহরলাল নেহেরু পুরস্কার। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে যে পুরস্কারটির মাধ্যমে গােটা বিশ্বের দৃষ্টি তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল, তা হল শান্তিতে নােবেল পুরস্কার। তিনি ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ভারতরত্ন পুরষ্কার পান। তিনি এই পুরস্কারগুলাে (তাঁর জীবনকালে ৭০০এরও বেশি) ও সম্মাননা গ্রহণ করেছিলেন নিজের নামে নয় বরং দুস্থ-অসহায় গরীবদেরই নামে।
১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ সেপ্টেম্বর মাদার তেরেজা মারা যান। ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে পােপ সাধু দ্বিতীয় জন পল তাঁকে “ধন্যা” শ্রেণিভুক্ত করেন। ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে পােপ ফ্রান্সিস রােম নগরীতে মাদার তেরেজাকে “কোলকাতার সাধ্বী তেরেজা” আখ্যায় ভূষিত করেছেন। তিনি সার্বজনীন ভালবাসার কথাই তাঁর সেবার কাজে-কর্মে প্রকাশ করছেন, তাই তিনি বিশ্বের বুকে মাদার’ অর্থাৎ ‘মা’ হিসেবে পরিচিত।